রেসিপি - নিরামিষ শুক্তো রান্না (Shukto Recipe in Bengali) - Jana Dorkari Bangla

Breaking

রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৪

রেসিপি - নিরামিষ শুক্তো রান্না (Shukto Recipe in Bengali)

নিরামিষ দিনে ঘরোয়া পদ্ধতিতে শুক্তো রান্নাঃ

বাংলার সবচেয়ে পুরোনো এবং অতি পরিচিত একটি রেসিপি হলো শুক্তো। বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের সবজি বাজারে পাওয়া যায় তাই দিয়েই শুক্তো রান্না করা যায়। ঋতু পরিবর্তন এবং গরমের সময় খাবারে স্বাদ বা মুখে রুচি ফেরাতে আমাদের শুক্তো খাওয়া দরকার। বাজারে যেসব টাটকা সবজি পাওয়া যায়, সেখান থেকে বিশেষ কিছু সবজি কিনে নিয়ে, শুক্তো তৈরী করার রেসিপি নিয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

রেসিপি - নিরামিষ শুক্তো

রান্নার উপাদানঃ

সবজিঃ আপনি যতটা রান্না করবেন সেই পরিমাণ সবজি নেবেন। এখানে চারজনের জন্য শুক্তো রান্না করার জন্যে যতটা সবজির প্রয়োজন তা নীচে উল্লেখ করা হলো


সবজি সাইজ পরিমাণ
আলু বড় সাইজ 1 piece
মিষ্টি আলু মাঝারি সাইজ 2 pieces
বেগুন মাঝারি সাইজ 2 pieces
উচ্ছে মাঝারি সাইজ 5 pieces
সজনের ডাঁটা বড় এবং মোটা ডাঁটা 4 pieces
কাঁচকলা বড় অথবা মাঝারি সাইজ 1 piece
কাঁচা পেঁপে মাঝারি সাইজ- অর্ধেক 250g
শিম মাঝারি সাইজ 250g
গাজর মাঝারি সাইজ 2 pieces


মশলাঃ শুক্তো রান্নায় মশলার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।  শুক্তো রান্না করার জন্যে যে সব মশলা নিতে হবে সেগুলো এবার নীচে উল্লেখ করা হলো

head 1 head 2
রাধুনী 1/2+1/2+1/2 চা চামচ
পাঁচফোড়ন 1+1/2 চা চামচ
মৌরী 1/3 চা চামচ
সাদা জিরা 1/3 চা চামচ
তেজপাতা 1 টি
শুকনো লঙ্কা (optional) 1 টি
সাদা সরষে 1 চা চামচ
আদা বাটা 1 চা চামচ
শুকনো লঙ্কা 1 টা
তেজপাতা 1 টা
পোস্ত 1 চা চামচ

অনান্য সামগ্রীঃ শুক্তো রান্নার জন্যে ভালো মানের হাফ লিটার দুধ নিতে হবে। শুক্তো রান্নায় লবণ এবং চিনি পরিমাণ মতো দিতে হবে। এছাড়া রান্না করার জন্যে একটি করে কড়াই, ঝাঁঝরি হাতা, হাতা, টেবিল চামচ, চা চামচ, খুন্তি, দুটি থালা বা বড় স্টিলের প্লেট এবং দুধ জ্বাল দেওয়ার জন্যে একটি সসপ্যান ইত্যাদি প্রয়োজন। শুক্তো রেসিপির একেবারে শেষে Amazon লিঙ্ক দেওয়া আছে, আপনারা সেখান থেকে রান্নার জন্যে দরকারি বাসনপত্র অনলাইনে কিনতে পারবেন। 

সবজি কাটাকাটিঃ 
রান্নার আগে সবজিগুলি ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। শুক্তো রান্নার জন্যে সবজিগুলি একটু লম্বা করে কাটতে হবে। সবজির টুকরো গুলো লম্বায় প্রায় আপনার তর্জনী আঙ্গুলের সমান হবে। বেগুন এবং কাঁচকলার টুকরো গুলি একটি আলাদা পাত্রে রাখুন। সেই পাত্রে জল দিয়ে 1 চা চামচ হলুদ এবং 1 চা চামচ লবণ গুলিয়ে দিয়ে রাখুন। অনান্য সবজির টুকরোগুলি শুধু জলে ভিজিয়ে রাখুন। 


মশলা তৈরীঃ

বাটা মশলা তৈরীঃ শুক্তো রান্না শুরু করার আগে নীচের বাটা মশলা গুলো তৈরী করে নিতে হবে ।
(i) আদা বাটা 1 চা চামচ
(ii) সাদা সরষে বাটা 1 চা চামচ
(iii) রাধুনি বাটা 1/2 চা চামচ
(iv) মৌরী বাটা 1/3 চা চামচ
(v) পোস্ত বাটা 1/2 চা চামচ (অপশনাল)

ভাজা মশলা তৈরীঃ শুক্তো রান্নায় স্বাদ আনতে ভাজা মশলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি কড়াই ওভেনের ওপরে বসিয়ে, হালকা আঁচে কড়াই গরম করুন। হালকা গরম হলেই কড়াইয়ে 1 চা চামচ পাঁচফোড়ন, 1/3 চা চামচ সাদা জিরা, 1/2 চা চামচ রাধুনি দিন। এবার মশলাগুলো ধীরে ধীরে নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না মশলার রঙ বদলাতে শুরু করে। মশলার রঙ গাঢ় হয়ে আসতেই, গরম কড়াইটি সাবধানে ধরে ওভেনের থেকে নামিয়ে নিন। এরপর ভাজা মশলাগুলি হামনদিস্তায় বেটে অথবা মিক্সিতে গুঁড়ো করে নিন। 

রান্নার আগে সব মশলাগুলি একটি বড় থালা বা প্লেটের ওপরে সাজিয়ে নেবেন। এতে রান্নার সময় আপনার সুবিধা হবে। 

রন্ধন প্রণালীঃ

ভাজতে শুরু করুনঃ ওভেনের ওপরে কড়াই বসিয়ে মাঝারি আঁচে গরম করুন। হালকা গরম হলেই কড়াইয়ে এক টেবিল চামচ সরষের তেল দিন। তেল গরম হয়ে উঠলে কড়াইয়ে ডালের বড়ি দিয়ে ভাজতে থাকুন। ডালের বড়ির রঙ বদলাতে শুরু করলেই ঝাঁঝরি হাতা দিয়ে ভাজা বড়ি কড়াই থেকে নামিয়ে একটি বড় থালা বা প্লেটে রাখুন। 
        এরপর কড়াইয়ে পর পর কাঁচকলা, শিম, বেগুন এবং উচ্ছের টুকরোগুলি দিয়ে 3-5 মিনিট ধরে প্রতিটি সবজি ভেজে ঝাঁঝরি হাতা দিয়ে তুলে প্লেটে রাখুন। বেগুনের টুকরোগুলি ভাজার সময় বেগুনের পিঠের দিক কড়াইয়ে দিয়ে ভাজা শুরু করবেন। এতে বেগুন কড়াইয়ের তেল টেনে নেবে না। এবং সবার শেষে উচ্ছের টুকরোগুলি একটু বেশি সময় নিয়ে কড়া করে ভাজবেন।

ফোড়ন পর্বঃ  ভাজার প্রথম পর্ব সম্পূর্ণ হওয়ার পরে এবার লক্ষ্য করুন কড়াইয়ে কতটা তেল আছে। তেল কম থাকলে কড়াইয়ে হাফ টেবিল চামচ সরষের তেল দিন। ওভেনের আঁচ বাড়িয়ে দিন। তেল গরম হয়ে উঠলে কড়াইয়ে 1/2 চা চামচ পাঁচফোড়ন, 1/2 চা চামচ মৌরি, একটি শুকনো লঙ্কা এবং একটি তেজপাতা দিন। কড়াইয়ের মশলাগুলি ফুটতে শুরু করলেই, ওভেনের আঁচ একেবারে কমিয়ে দিন। এরপর কড়াইয়ে একসঙ্গে আলু, মিষ্টি আলু, গাজর, সজনের ডাঁটা দিন। 
         এবার ওভেনের আঁচ মাঝারি রেখে খুন্তি ব্যাবহার করে সবজিগুলি একটু নাড়িয়ে নিন। এবার একটি ঢাকনা দিয়ে কড়াইয়ের মুখ বন্ধ করে তিন মিনিট ধরে রান্না হতে দিন। তিন মিনিট পরে কড়াইয়ের ঢাকনা খুলে সবজিগুলি পুনরায় নাড়িয়ে দিন। এবার কড়াইয়ের মাঝের সবজিগুলি একটু পাশে সরিয়ে দিয়ে একটা ছোট গর্ত তৈরী করুন যাতে ওপর থেকে কড়াইয়ের তেল দেখা যায়।

বাটা মশলা দিনঃ এখন কড়াইয়ের সবজির মধ্যে তৈরী গর্তের মধ্যে ধীরে ধীরে আদা রাধুনি এবং মৌরী বাটাগুলো দিন। তারপর বাটা মশলা কষানোর জন্যে খুন্তি দিয়ে ধীরে ধীরে নাড়তে থাকুন। এক মিনিট পরে কষানো মশলার সঙ্গে কড়াইয়ের সবজিগুলো খুন্তি দিয়ে মিশিয়ে দিন। এবার কড়াইয়ের মুখ ঢাকনা দিয়ে দিয়ে আরো দুই মিনিটের জন্যে রান্না হতে দিন। দুই মিনিট পরে ঢাকনা সরিয়ে এবার সবজিতে সরষে এবং পোস্ত বাটা দিন। সবজিগুলো আবার খুন্তি দিয়ে প্রায় একমিনিট ধরে নাড়তে থাকুন। এবার কড়াইতে এক বাটি জল দিন।ওভেনের আঁচ বাড়িয়ে দিয়ে কড়াইয়ের ঢাকনা এবার পাঁচ মিনিটের জন্য ঢেকে দিন।

দুধ গরম করুনঃ যদি আপনার গ্যাস ওভেনে দুটি বার্নার থাকে তাহলে অন্যটিতে মাঝারি আঁচে একটি সসপ্যান বসিয়ে ওর মধ্যে দুধ ঢেলে গরম করতে দিন। যদি ওভেনে দুটি বার্নার না থাকে বা আলাদা করে দুধ গরম করার ব্যাবস্থা না থাকে তাহলে রান্নার শুরুতেই মশলা তৈরী করার সময় দুধ গরম করে নেবেন। দুধ প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে গরম করবেন। এর মধ্যে যদি দুধ উথলে ওঠে তাহলে ওভেনের আঁচ কমিয়ে দেবেন। 

সেদ্ধ সবজি পরীক্ষা করুনঃ পাঁচ মিনিট পরে ওভেনের আঁচ কমিয়ে সবজির কড়াইয়ের ঢাকনা খুলুন। একটি হাতা দিয়ে সাবধানে গরম সবজির মধ্যে থেকে একটুকরো আলু এবং গাজর তুলে নিন। এবার একটু ঠান্ডা করে নিয়ে সবজির টুকরো দুটো আঙ্গুল দিয়ে টিপে পরীক্ষা করে দেখুন যে সেগুলি সেদ্ধ হয়েছে কি না।সেদ্ধ হলে আলুর টুকরো হাতের আঙ্গুলের চাপে নরম হয়ে ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু যদি সবজি সেদ্ধ না হয় তাহলে যতক্ষণ না সেদ্ধ হচ্ছে 1/2 বাটি জল কড়াইয়ে দিয়ে আবার ওভেনের আঁচ বাড়িয়ে পাঁচ মিনিটের জন্য গরম করতে দিন। 

কড়াইয়ে দুধ ঢেলে দিনঃ সবজি সেদ্ধ হয়ে গেলে ওভেনের আঁচ একেবারে কমিয়ে দিন। এবার ধীরে ধীরে কড়াইয়ের মধ্যে বাটি দিয়ে পরিমাণমত দুধ ঢালুন। দুধ ঢালার পরে যদি আপনার মনে হয় যে শুক্তোর ঝোলের পরিমাণ কম হয়ে যাবে, তাহলে কড়াইয়ের মধ্যে আরো কিছুটা দুধ অথবা জল দিন। তবে অতিরিক্ত জল বা দুধ দেবেন না। কারণ শুক্তোর ঝোল ঘন এবং মাখামাখি ভাব থাকলে সেই রান্নার স্বাদ বেশী ভালো হয়। দুধ দেওয়ার পরে এক চামচ চিনি দিন। চিনি দেওয়ার পরে ঢাকনা দিয়ে কড়াই দুই মিনিটের জন্যে ঢেকে দিন। এই সময় ওভেনের আঁচ মাঝারি অবস্থায় রাখবেন।  

ভাজা সবজিগুলো দিনঃ দুই মিনিটের পরে কড়াইয়ের ঢাকনা খুলে, ফুটন্ত ঝোলের মধ্যে ধীরে ধীরে আগে থেকে ভেজে রাখা ডালের বড়ি এবং ভাজা সবজিগুলো দিয়ে দিন। খুন্তি দিয়ে ভাজা সবজিগুলো ধীরে ধীরে ঝোলের ওপরে ছড়িয়ে দেবেন। এবার ঝোলের মধ্যে আপনার স্বাদমতো লবণ ছড়িয়ে দিন। এবার ঢাকনা দিয়ে কড়াই পুনরায় ঢেকে দিয়ে মাঝারি আঁচে তিন মিনিটের জন্যে ফুটতে দিন। 

ভাজা মশলা দিনঃ তিন মিনিটের পরে ঢাকনা খুলে খুন্তি দিয়ে শুক্তোর সবজিগুলো ধীরে ধীরে দুই তিন বার নাড়িয়ে দিন। এবার হাতা দিয়ে কড়াই থেকে সাবধানে একটু ঝোল তুলে নিয়ে, চিনি এবং লবণের স্বাদ ঠিকমতো হয়েছে কিনা পরীক্ষা করে দেখুন । ঝোলের স্বাদ ঠিক থাকলে ভাজা মশলাটা নিয়ে ধীরে ধীরে শুক্তোর ওপরে ছড়িয়ে দিন। এক চামচ ঘি দিন। এবার খুন্তি দিয়ে শুক্তোর সবজিগুলো আবার ধীরে ধীরে তিন চার বার নাড়িয়ে দিন। ওভেনের আঁচ একটু কমিয়ে দিয়ে আরো দুই মিনিটের জন্য রাখুন।

দুই মিনিট পরে ওভেন থেকে শুক্তোর কড়াই নামিয়ে নিন। পাঁচ মিনিট পরে ভাতের সঙ্গে গরমাগরম শুক্তো পরিবেশন করুন। 

শুক্তো রান্না করা খুবই সহজ। শুধু দরকার রান্নার প্রতি একটু ধৈর্য্য, একাগ্রতা এবং ভালবাসা। 

"ঘরোয়া উপায়ে রান্না শুক্তো" (Shukto Recipe in Bengali) রেসিপিটি পড়ে বাড়িতে অবশ্যই একবার শুক্তো বানিয়ে ফেলুন। আপনার হাতে রান্না করা শুক্তোর স্বাদ কেমন হয়েছিলো নীচের কমেন্ট বক্সে লিখে জানিয়ে দিন। এছাড়া অন্যদের সাথে এই শুক্তোর রেসিপিটি শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু।



[Affiliate Marketing Section]

শুক্তো রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় বাসনগুলি Amazon থেকে অনলাইনে কেনার জন্যে লিঙ্ক নীচে দেওয়া হলোঃ

বাসনপত্র কেনার জন্য 🛒-এর ওপরে ক্লিক করুন
কড়াই 🛒
ঝাঁঝরি হাতা 🛒
হাতা 🛒
খুন্তি 🛒
চামচ 🛒
সসপ্যান 🛒
থালা 🛒

শুক্তো রান্নার জন্যে প্রয়োজনীয় রান্নার মশলা অনলাইনে Amazon থেকে কেনার জন্যে লিঙ্ক নীচে দেওয়া হলোঃ 

রান্নার মশলা কিনতে 🛒-এর ওপরে ক্লিক করুন
রাধুনী 🛒
মৌরী 🛒
পাঁচফোড়ন 🛒
তেজপাতা 🛒
সরষে 🛒
পোস্ত 🛒

কোন মন্তব্য নেই: