রেসিপি বিরিয়ানি - পর্ব ১ - এঁচোড়ের বিরিয়ানি - Jana Dorkari Bangla

Breaking

সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২৩

রেসিপি বিরিয়ানি - পর্ব ১ - এঁচোড়ের বিরিয়ানি

এঁচোড়ের বিরিয়ানি রেসিপি 

 ডিজিটাল ডেস্কঃ 

বিরিয়ানির ইতিহাস আজ ফেসবুক আর ইউটিউবের দৌলতে সবাই এখন জানে। আমি আর সে ব্যাপারে বিস্তারিত গেলাম না। আপনি যদি পেঁয়াজ রসুন খান, অথচ মাছ, মাংস, ডিম খান না, তাহলে এই এঁচোড়ের বিরিয়ানি আপনার জন্যে। 

Veg biryani
Image Source: flickr.com

উপকরণঃ উপকরণের মধ্যে অবশ্যই নেবেন এঁচোড়, পনির, আলু,  পেঁয়াজ, রসুন, আদা, দুধ, জাফরান, টকদই, ঘি, স্টার অ্যানাইজ, জয়িত্রী, জায়ফল, শাহী জিরা, শাহী বিরিয়ানি মশলা ইত্যাদি।

পদ্ধতিঃ প্রথমে বেরেস্তা বানাতে হবে। এর জন্য কড়াইয়ে হালকা গরম সরষের তেলে কুচানো পেঁয়াজ দিন। লবণ এবং চিনি অল্প করে দিন। হালকা আঁচে পেঁয়াজ ভাজুন। পেঁয়াজের রঙয়ের পরিবর্তন হতে শুরু করলেই। ভাজা পেয়াজগুলো তেল থেকে তুলে ব্লটিং পেপারের ওপর রাখুন।  

এরপর কড়াইয়ের সরষের তেলে এক চিমটে ফুড কালার অথবা হলুদ দিয়ে অর্ধেক করে কেটে রাখা আলুগুলো দিন। অল্প লবণ ছড়িয়ে দিয়ে নাড়তে থাকুন। আলুর পিঠ হালকা ভাজা হয়ে গেলে নামিয়ে আলাদা করে রাখুন। 

এবার এঁচোড় পনিরের তরকারিটা করে নেবেন। এঁচোড়গুলো আধসেদ্ধ করে নেবেন।  এরপর সাদা তেলে পনিরগুলো হালকা ভেজে নিন। এবার কড়াইয়ে সাদা তেল এবং ঘি দিন। তেল-ঘি গরম হলে, জয়িত্রী, গোটা গরম মশলা, তেজপাতা ফোড়ন দিন। এরপর আদা-রসুনের পেস্ট, জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো, বিরিয়ানি মশলা দিয়ে মিশ্রনটিকে ভালোভাবে কষাতে থাকুন। টকদই দিয়ে মশলার সাথে ভালোভাবে কষিয়ে নিন। এবার কড়াইতে সেদ্ধ করা এঁচোড়গুলো দিন। আঁচ কমিয়ে ২-৩ মিনিট ধীরে ধীরে নাড়তে থাকুন। একটা ঢাকনা দিয়ে কড়াই ৫ মিনিটের জন্য ঢেকে দিন।  ৫ মিনিট পর কড়াই ঢাকনাটা থেকে নামিয়ে রান্নাটা একটু নাড়িয়ে দিন।  এরপর কড়াইতে এক তৃতীয়াংশ জল দিন। মাঝারি আঁচে রান্না করবেন। ঝোল ফুটতে শুরু করলে পনির গুলো কড়াইতে দিয়ে দিন। ২ মিনিটের জন্য ঢাকনা দিয়ে কড়াই ঢেকে দিন। দুই মিনিট পর ঝোল কমে এলে আঁচ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিন। ঝোল একেবারে শুকিয়ে ফেলবেন না। কড়াই উনুন থেকে নামিয়ে ফেলুন।

এরপর আপনারা ভাতটা তৈরি করে নেবেন। বিরিয়ানির রাইস তৈরি করার পদ্ধতিটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন বিরিয়ানির আসল গন্ধটা কিন্তু ভাত থেকেই আসে। আপনি যে বাসমতি চাল নেবেন সেটা রান্নার প্রায় এক ঘন্টা আগে ভিজিয়ে রাখবেন। এখন ডেকচিতে প্রথমে জল গরম করতে দিন। এরপর গোটা গরম মশলা, বড় এলাচ, শাহিজিরা, স্টার অ্যানাইজ, জয়িত্রী, গোলমরিচ  স্টিলের ছাঁকনি  এর মধ্যে রেখে ছাঁকনিটিকে জলের মধ্যে রেখে দিন।

স্টিলের ছাকনি
স্টিলের ছাঁকনি - Deep Fryer Strainer

যদি স্টিলের ছাঁকনি না থাকে তাহলে পরিস্কার কাপড়ের মধ্যে মশলাগুলো নিয়ে পুঁটলি বানিয়ে জলে দিয়ে দিন। এরপর জল ফুটতে শুরু করলে ডেকচির জলে দুই তিন চামচ সাদা তেল দিন। এর সাথে দিন দুই চামচ কেওড়া জল, দুই চামচ গোলাপ জল। জল টগবগ করে ফুটতে শুরু করলে জল থেকে স্টিলের ছাঁকনি বা কাপড়ের পুঁটলিটা নামিয়ে নিন। এবার জলের মধ্যে ভিজিয়ে রাখা বাসমতী চাল ছেড়ে দিন। 

বাসমতী চাল ফুটতে বেশী সময় লাগে না। বিরিয়ানির জন্যে বাসমতী চাল ৮০% সেদ্ধ করতে হবে। ফুটন্ত জলে চাল দেওয়ার পর চার মিনিট হলেই, একটি বড় চামচ বা হাতা নিয়ে চাল তুলে দেখুন কতটা সেদ্ধ হয়েছে। এরপর একটু আঁচ কমিয়ে দিন। আরো তিন মিনিট পর ভাত নামিয়ে ফেলুন। ভাতের ফ্যান ঝাড়বেন না।

এরপর তাড়াতাড়ি যে পাত্রে ( হাঁড়ি, ডেকচি, গামলা অথবা বোগনো নেবেন) বিরিয়ানি করবেন সেটাকে উনান বা চুলার ঢিমে আঁচের ওপর বসান। বিরিয়ানির হাঁড়িতে তেজপাতা দিন। ঘি দিয়ে হাঁড়ির ভেতরটা মুছে নিন। এবার ঝাঁঝরি হাতা নিয়ে ডেকচি থেকে ভাত ছেঁকে তুলে ধীরে ধীরে বিরিয়ানি হাঁড়ির নীচের কিছুটা অংশ ভরিয়ে দিন। ভাত কখনোই ঠেসে ঠেসে দেবেন না। এবার বিরিয়ানির ভাতের স্তরের ওপর এক চামচ বিরিয়ানি মশলা ছড়িয়ে দিন, কিছুটা ভাজা বেরেস্তা দিন, গোলমরিচ গুঁড়ো দিন, একটা জায়ফল গুঁড়ো করে অর্ধেকটা দিন। এরপর একচামচ করে গোলাপ জল দিন, কেওড়া জল, পাতিলেবুর রস দিন। 

শাহী বিরিয়ানি মশলা
শাহী বিরিয়ানি মশলা

এবার কড়াই থেকে এঁচোড়-পনিরের তরকারীটা নিয়ে বিরিয়ানির ভাতের স্তরের ওপর ধীরে ধীরে সমানভাবে ছড়িয়ে দিন। সম্পূর্ণ তরকারী ঢালা হয়ে গেলে পুনরায় ডেকচি থেকে ঝাঁঝরি হাতা দিয়ে ভাত নিয়ে তরকারীর ওপর সমানভাবে দিতে থাকুন যতক্ষণ না তরকারিটা পুরোপুরি ঢেকে যায়। এরপর ভাতের স্তরের ওপর পুনরায় এক চামচ করে বিরিয়ানি মশলা এবং ঘি ছড়িয়ে দিন। এবার ভেজে রাখা আলুগুলো নিয়ে সুন্দরভাবে ভাতের স্তরের ওপর সাজিয়ে দিন। 

এরপর পুনরায় ডেকচি থেকে ঝাঁঝরি হাতা দিয়ে ভাত নিয়ে আলুর ওপর সমানভাবে দিতে থাকুন। সম্পূর্ণ ভাত ঢালা শেষ হলে এবার একটা বাটিতে হালকা গরম দুধ নিন। দুধের মধ্যে একচিমটে ফুডকালার দিন (এটা অপশনাল, আপনি চাইলে এটা নাও দিতে পারেন)। ফুডকালার দুধে ভালোভাবে গুলিয়ে নিন। এবার দুধে দুই ফোঁটা মিঠা আতর মেশান (এটাও অপশনাল)। 

এবার ভাতের সর্বশেষ স্তরের ওপর এক চামচ করে বিরিয়ানি মশলা, ঘি, গোলাপ জল, কেওড়া জল দেবেন। এরপর ছোট চামচের অর্ধেক চামচ লবণ এবং অর্ধেক চামচ চিনি দেবেন। এবার আগে থেকে তৈরী করে রাখা ফুড কালার এবং মিঠে আতর মিশ্রিত দুধের ওপর কেশর ছড়িয়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ভাতের ওপর ছড়িয়ে দিন। তবে আপনি যদি ফুড কালার ব্যাবহার না করেন, তাহলে সেক্ষেত্রে বিরিয়ানিতে যতটুকু কেশর দেবেন তাঁর অর্ধেক পরিমাণ কেশর প্রথমে দুধে ভালোভাবে গুলিয়ে নিন, এরপর কেশর মিশ্রিত দুধের ওপর বাকি অর্ধেক কেশর ছড়িয়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ভাতের ওপর ছড়িয়ে দেবেন। 

এরপর অবশিষ্ট বেরেস্তাগুলো বিরিয়ানি হাঁড়ির ভাতের সর্বশেষ স্তরের ওপর সমান ছড়িয়ে দেবেন। এবার ভাতের ফ্যানের জলে আটা মাখিয়ে বিরিয়ানির হাঁড়ির মুখের চারপাশে গোল করে দিন। ঢাকনা দিয়ে বিরিয়ানি হাঁড়ির মুখ ভালোভাবে সিল করে দিন। এবার উনান বা চুলার আঁচ বাড়িয়ে দিন। দশ মিনিট ডাইরেক্ট হিট দিতে হবে। 

বিরিয়ানির হাঁড়ি বা বোগনো
বিরিয়ানি বানানোর পাত্র

দশ মিনিট পর উনানের ওপর একটি লোহার তাওয়া বসিয়ে তাঁর ওপর হাঁড়ি চাপিয়ে দিন। এবার অল্প আঁচে ইন্ডাকশন হিটে ২৫ মিনিট রান্না হবে। আপনার যদি কয়লার উনুন হয় তাহলে কয়েকটি উত্তপ্ত কয়লা হাঁড়ির ঢাকনার ওপর রেখে দিতে পারেন। প্রায় পঁচিশ মিনিট পর উনানের আঁচ বন্ধ করুন। আরো দশ মিনিট পর  হাঁড়ি নামিয়ে নিন। এবার ঢাকনা খুলে গরম গরম পরিবেশন করুন। 

এঁচোড়ের বিরিয়ানি গরমকালে রায়তা আর শীতকালে পনির টিক্কা মশলা রেসিপি দিয়ে খাবেন। রেসিপিটি কেমন লাগলো সেটা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। 


FAQ:

My Blog with FAQ
Q: ফুড কালারের বদলে কেশর বা জাফরান ব্যাবহার করা যাবে?
A: হ্যাঁ অবশ্যই কেশর ব্যাবহার করা যাবে। আজকাল খাঁটি কেশর বা জাফরান সহজে পাওয়া যায় না এবং খুব দামী হওয়ার জন্য অনেকেই ফুড কালার ব্যাবহার করে থাকেন

Q: এঁচোড় ছাড়া আর কোন সবজি ব্যাবহার করা যেতে পারে?
A: শীতকালে কাঠালের বদলে ফুলকপি, ব্রকলি এবং আলু দিয়ে সুস্বাদু ভেজ বিরিয়ানি করা যেতে পারে। শীতকালীন সব্জি দিয়ে বিরিয়ানি রান্না নিয়ে আমি শীঘ্রই একটি নতুন ব্লগ পোস্ট করবো

Q. বিরিয়ানি রান্নার সময় কতক্ষণ হালকা আঁচে রাখতে হবে?
A. বিরিয়ানি রান্নার সময় 20 থেকে 25 মিনিট পর্যন্ত হালকা আঁচে রাখতে হবে। 

Q বিরিয়ানি রান্নার পরে কতক্ষণ বিশ্রামে রাখা যাবে?
A বিরিয়ানির হাঁড়ি বা পাত্রকে উনুনের আঁচ থেকে নামানোর পরে পাঁচ থেকে দশ মিনিট বিশ্রামে রাখতে হবে। 

কোন মন্তব্য নেই: