ইউরিক অ্যাসিডের জন্য ব্যাথা হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না - Jana Dorkari Bangla

Breaking

মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪

ইউরিক অ্যাসিডের জন্য ব্যাথা হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না

ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার জন্য ব্যাথা হলে যে সব খাবার এড়িয়ে চলা উচিতঃ 

ইউরিক অ্যাসিডঃ

বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার কারণে শরীরে স্বাভাবিক মাত্রায় উৎপন্ন হওয়া পিউরিন যৌগ ভেঙ্গে ইউরিক অ্যাসিড তৈরী হয়। এই ইউরিক অ্যাসিড রক্তের মাধ্যমে কিডনীতে গিয়ে ফিল্টার হয়ে মূত্রের সঙ্গে শরীরে বাইরে বেরিয়ে যায়। ফলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের ভারসাম্য বজায় থাকে। 


ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার কারণঃ

কিন্তু কোনো শারীরবৃত্তীয় সমস্যার কারণে বা দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত পিউরিনের মাত্রা বেশী থাকা খাবার খেলে বা কিডনীর কার্যক্ষমতা কমে গেলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়তে থাকে। রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা [পুরুষদের ক্ষেত্রে 4.0-8.5 mg/dL এবং নারীদের ক্ষেত্রে 2.7-7.3 mg/dL] অতিক্রম করলেই শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে ইউরিক অ্যাসিডের কেলাস জমতে শুরু করে। এবং ব্যাথার সৃষ্টি হয়। 

Ad

লক্ষণ এবং অনুভূতিঃ

ইউরিক অ্যাসিডের বেড়ে যাওয়ার ফলে পায়ের গোড়ালি, হাঁটু জয়েন্টে, হাতের কবজি ইত্যাদি স্থানে বেশী ব্যাথা হতে দেখা যায়। ইউরিক অ্যাসিডের ব্যাথা শুরু হওয়ার চার থেকে আট ঘন্টার মধ্যেই ব্যাথা মারাত্বক আকার ধারণ। আর এই ব্যাথা যে কতটা যন্ত্রনাকর হয় যার হয়েছে সেই একমাত্র অনুভব করতে পারবে। ব্যাথার স্থানের ত্বক লালচে এবং ধীরে ধীরে ফুলতে শুরু করে। আক্রান্ত হাত বা পা নড়াচড়া করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। একে গেঁটে বাত বা গাউট বলে। আক্রান্ত রোগীর প্রচন্ড অস্বস্তি হয় এবং ঘুমাতে পারে না।


ব্যাথা হলে কি করবেন?

শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট বিশেষ করে পায়ের গোড়ালি, পায়ের পাতা, হাঁটু, কবজি, হাতে আঙ্গুলে কোন আঘাত বা চোট ছাড়াই ব্যাথা শুরু হলে অতিদ্রুত নিকটবর্তী ডাক্তারের কাছে যান বা যোগাযোগ করুন। ডাক্তারের পরামর্শ মত রক্ত পরীক্ষা এবং ওষুধ খাবেন। রক্ত পরীক্ষার ফলাফলে আপনার ব্যাথা যদি অ্যাসিডের বেড়ে যাওয়ার কারণে হয় তাহলে আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে খাবার এবং ওষুধ খেতে যেতে হবে। 



Doctor is giving suggestion to uric acid patient
Image Credit: Photo by Thirdman


কি কি খাবার খাওয়া যাবে নাঃ

বর্তমান সময়ে ডাক্তাররা বলেন যে ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে সব ধরনের খাবার খাওয়া সম্ভব কিন্তু খাবারের পরিমাণ কম খেয়ে শরীরে অ্যাসিডের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব। কিন্তু যাদের রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ অতিরিক্ত মাত্রায় (>12mg/dL) বেড়ে গেছে, তাদের ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি কিছু কিছু খাবার রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এড়িয়ে চলাই ভালো। কি কি খাবার খাওয়া যাবেনা সেগুলি নিয়ে নীচে আলোচনা করা হলো।


(i) সবজিঃ

ইউরিক অ্যাসিডের কারণে ব্যাথায় আক্রান্ত রোগীর সবজি রান্না করার সময় সবজি গরম জলে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে। রান্না করার সময় সবজি আগে সেদ্ধ করে নিয়ে তারপরে রান্না করতে হবে। সবজি রান্নার সময় একটি তেজপাতা ফোড়ন দেবেন।


SL যেসব সবজি খাওয়া যাবে না
1 বেগুন
2 সজনে
3 পটোল
4 ফুলকপি
5 ঢ্যাড়শ
6 সীম
7 ব্রকোলি
8 মাশরুম
9 টম্যাটো
10 বীট
11 কাঁচা পেঁয়াজ
12 এঁচোড় এবং কাঠালের বীজ
13 মটরশুটি
14 শালগম
14 বাঁধাকপি
14 স্কোয়াশ
14 মিষ্টি কুমড়ো

(ii) শাকঃ

শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা শরীরের পক্ষে ভালো। কিন্তু তা সত্ত্বেও রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে পালং শাক, লাল শাক এবং পুঁই শাক খাওয়া যাবে না। 


(iii) ডালঃ

ডাল আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে সবধরনের ডাল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 


(iv) ফলঃ

ইউরিক অ্যাসিডের কারণে শরীরে ব্যাথা হলে যেকোনো পাকা এবং মিষ্টি স্বাদ যুক্ত ফল খাওয়া যাবে না। এছাড়া সমস্ত শুকনো ফল এড়িয়ে চলবেন।


SL যে সমস্ত মিষ্টি ফল খাওয়া যাবে না
1 আম
2 কাঁঠাল
3 কমলালেবু
4 কলা
5 আপেল
6 তরমুজ
7 নাসপাতি
8 আঙ্গুর
9 পাকা পেঁপে

এখানে বলে রাখা ভালো যে আপেল সিডার ভিনিগার ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু মিষ্টি স্বাদযুক্ত আপেল এবং কমলা খেলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়।


(v) মাছঃ

শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ যেমন চিংড়ি, লবস্টার, ইলিশ, পমফ্রেট এবং মিষ্টি জলের মাছ বোয়াল, ভেটকি, পাবদা, লোটে ইত্যাদি এবং কাঁকড়া, শামুক খাওয়া যাবে না। এছাড়া বড় চর্বি বা তেল যুক্ত মাছ, মাছের মাথা এবং মাছের ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 


ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে এই খাবারগুলি খাওয়া যাবে না
Image Credit: Image by freepik and Canva


(vi) অধিক প্রোটিন জাতীয় খাবারঃ

ইউরিক অ্যাসিডের কারণে শরীরে ব্যাথা বেড়ে গেলে, যেসব খাবারে অধিক মাত্রায় প্রোটিন আছে সেগুলি খাওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে। 


খাওয়া যাবে না যে সব অধিক প্রোটিন যুক্ত খাবার
1 ডিম
2 চর্বিযুক্ত লাল মাংস
3 চর্বিযুক্ত পোলট্রি মুরগির মাংস
4 অর্গান মিট (মেটে, কচকচি, চুস্তা)
5 দুধ, পনির, বাটার, চিজ
6 সয়াবিন

(vii) অনান্য খাবারঃ

রক্তে লাগাম ছাড়া ইউরিক অ্যাসিডের বাড়াবাড়ি হলে নীচের তালিকায় থাকা খাবারগুলি খাওয়া যাবে না


head 1 head 2 head 3
1 সমস্ত প্যকেটজাত খাবার জ্যাম, জেলি, আচার, চিপস
2 নুডুলস, চকলেট, বিভিন্ন রকমের সস
3 সমস্ত রকমের ফার্স্ট ফুড চাউমিন, মোমো, চপ, কাটলেট
4 খাস্তা কচুরি, সিঙ্গারা, পাপড়ি চাট, জিলিপি
5 যেকোনো মিষ্টি স্বাদের খাবার রসগোল্লা, সন্দেশ, চমচম, ল্যাংচা
6 আইসক্রিম, পেষ্ট্রি কেক, ডেজার্ট
7 চিনি বা মিষ্টি স্বাদ যুক্ত পানীয় কোল্ড ড্রিঙ্কস, শরবত, আখের রস
8 খেজুরের রস, মধু, দুধ চা
9 সমস্ত নোনতা খাবার মুড়ি, চানাচুর
10 অ্যালকোহল বিয়ার এবং অনান্য দেশি বা বিদেশী মদ

এর পাশাপাশি ইউরিক অ্যাসিডের ব্যাথায় ভোগা রোগীকে স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে। ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে।  ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে প্রতিদিন 3-4 লিটার জল খেতে হয়। তবে হার্ট এবং ক্রনিক কিডনীর রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ মেনে নিদিষ্ট পরিমাণ মত জল পান করবেন।

ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় আক্রন্ত রোগীকে একদম কম ঝাল-মশলা দিয়ে রান্না করা খাবার খেতে হবে। রান্নায় তেজপাতা ফোড়ন দিতে হবে। রান্নায় গুঁড়ো মশলা এবং ভাজা মশলা ব্যাবহার করা যাবে না। 

কোন মন্তব্য নেই: