উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের জন্যে যে খাবারগুলি এড়িয়ে চলতে হবে
একটা সময় ছিলো যখন পঞ্চাশ ষাট বছর পরে মানুষের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ধরা পড়তো। এখন সেই যুগ চলে গেছে। তিরিশ পেরোলেই 40% শতাংশ যুবক যুবতী রক্তচাপের সমস্যায় ভুগতে শুরু করেছে। বৃদ্ধ বয়সে রক্তচাপের কারণগুলি হলো রক্তবাহের দেওয়ালের স্থিতিস্থাপকতা হারানো, ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরলের সমস্যা, থাইরয়েডের সমস্যা এবং কিডনীর সমস্যা।
![]() |
উচ্চ রক্তচাপ পরিমাপ করা হচ্ছে, Image by flickr.com |
কিন্তু যুবক বয়সে উচ্চ রক্তচাপের কারণ কি? এখন 18-20 বছরের ছেলেমেয়েদেরও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগতে শুরু করেছে। এর কারণ হিসাবে চিকিৎসক এবং গবেষকরা বলছেন যে কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপের কারণগুলির মধ্যে নিয়মিত দৈহিক পরিশ্রমের অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস, মাত্রারিক্ত স্ট্রেস, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ওজন, মেদ এবং সঠিক পরিমাণে ঘুমের অভাব ইত্যাদি কারণে কম বয়সেই যুবক-যুবতীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিরাময় করা যায় না। কিন্তু একে নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ মত ওষুধ সেবন করতে হবে। এছাড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের (ডায়েটেশিয়ান) পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ হলে যে সব খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে সেগুলি নিয়ে নীচে কিছু সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো -
পালং শাক:
![]() |
পালং শাক, Image Credit: Needpix.com |
শীতকালে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু এই পালং শাক। কিন্তু 100 গ্রাম পালং শাকে প্রায় 79 মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে। নিয়মিত এই শাক খেলে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে গিয়ে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া পালং শাক শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
বীট:
![]() |
বীট বা বীটমূল, Image by Needpix.com |
বীট উপকারী সবজি। বীটের চপ খুবই লোভনীয় খাবার। কিন্তু 100 গ্রাম বীটে 78mg সোডিয়াম থাকে। যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ, ইউরিক অ্যাসিড, কিডনীর সমস্যা আছে। তাদের অবশ্যই নিয়মিত বীট খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
সয়া সস:
![]() |
সয়া সস, Image by Needpix.com |
এখন অধিকাংশ ফার্স্ট ফুড রান্নায় যেমন চাউমিন, নুডুলস, ফ্রাইড রাইস, এগরোল, মাঞ্চুরিয়ান ইত্যাদি রেসিপিতে সয়া সস ব্যাবহার করা হয়। কিন্তু 100 গ্রাম সয়া সসে প্রায় 5.5 মিলিগ্রাম সোডিয়ামের উপাদান থাকে যা উচ্চরক্তচাপের সমস্যার রোগীদের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক। তাদের সয়া সস দিয়ে তৈরী ফার্স্ট ফুড গ্রহণ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে হবে।
সামুদ্রিক মাছ:
![]() |
সলমন মাছের পিস, Image by Pickpik.com |
সমুদ্রের সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা তাদের খাদ্যতালিকায় সামদ্রিক মাছ যোগ করেন। অবশ্যই সামুদ্রিক মাছে পুষ্টিগত উপাদান বেশী থাকে। কিন্তু অধিকাংশ সামুদ্রিক মাছ বা সামুদ্রিক খাবারে মাত্রারিক্ত সোডিয়ামের উপস্থিতি দেখা যায়। বিশেষ করে সলমন, সার্ডিন মাছে প্রতি 100 গ্রামে গড়ে 230-270 মিলিগ্রাম মাত্রায় সোডিয়াম থাকে। অন্যদিকে 100 ম্যাকেরেল মাছে প্রায় 4.5 মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে। উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের এই মাছগুলিকে নিয়মিত খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
রেড মিট:
![]() |
লাল মাংস, Image by Pickpik.com |
অতিরিক্ত সম্পৃত্ত ফ্যাট থাকার জন্য রেড মিট মাত্রারিক্ত বা নিয়মিত খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ফল স্বরূপ উচ্চরক্তচাপের সমস্যা দেখা যায়। এছাড়া প্রতি 100গ্রাম রেড মিটে গড়ে 65-70মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে। উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরে ডাক্তাররা বলে থাকেন যে রেড মিট খাওয়া যাবে কি না অথবা কতটা খাওয়া যাবে। তবে উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল, হার্ট এবং কিডনীতে সমস্যা থাকলে সম্পূর্ণভাবে রেড মিট এড়িয়ে চলা উচিত।
চিজ এবং বাটার:
বাটার, Image by Flickr.com |
চিজ, বাটার সুস্বাদু দুগ্ধজাত পদার্থ হলেও, এগুলো উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিপদজনক হতে পারে। কারণ চিজ এবং বাটারে অতিরিক্ত পরিমাণে সম্পৃত্ত ফ্যাট থাকে। যার ফলে নিয়মিত এদের খাদ্য তালিকায় রাখলে শরীরে কোলেস্টেরল লেভেল বেড়ে যাওয়ার সর্বাধিক সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের তাদের খাদ্যতালিকায় চিজ, বাটার রাখার আগে ডাক্তার এবং পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নিতে হবে।
আচার:
![]() |
আচার, Image by Wikimedia |
আচারের নাম শুনলে সকলেরই জিভে জল আসে। কিন্তু এই আচার তৈরীতে এবং সংরক্ষণের জন্যে অতিরিক্ত সোডিয়াম উপাদান ব্যাবহার করা হয়। এই কারণে বাজার থেকে আচার কেনার সময় বোতলের লেবেলে দেখে নিতে হবে যে প্রতি 100 গ্রামে কতটা লবণ এবং সোডিয়াম উপাদান আছে। উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের মাত্রারিক্ত লবণ এবং সোডিয়াম উপাদান যুক্ত যেকোনো খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
চানাচুর:
![]() |
চানাচুর, Image by Wikimedia |
মুড়ির সঙ্গে চানাচুর এবং সঙ্গে চা সন্ধ্যের আসরকে জমিয়ে তোলে। কিন্তু সুস্বাদু চানাচুরে মাত্রারিক্ত লবণ এবং সোডিয়াম উপাদান থাকে। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই চানাচুর এড়িয়ে চলতে হবে।
কফি:
কফি, Image by Freepik |
শরীরে ক্লান্তি কাটিয়ে দ্রুত এনার্জি ফিরিয়ে আনে কফি। এছাড়া এটি রাত জেগে কাজ করতে সাহায্য করে। কফির অন্যতম উপাদান ক্যাফাইন শরীরে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এটা উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে বিপদজনক হতে পারে। কারণ তাদের ক্ষেত্রে রক্তচাপ একবার বেড়ে গেলে স্বাভাবিক উপায়ে কমতে চায় না। সুতরাং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কফি সেবন করা উচিত নয়।
ঠান্ডা পানীয়:
![]() |
ঠান্ডা পানীয়, Image by Needpix.com |
উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের বাজারজাত ক্যান বা বোতলবন্দী ঠান্ডা পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত। বিশেষ করে যাঁদের হার্ট এবং কিডনীর সমস্যা আছে তাদের এটিকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলতে হবে।
জাঙ্ক ফুড এবং ফার্স্ট ফুড:
Fast food, image source: wikimedia |
বাজারে বিক্রি হওয়া প্যাকেটজাত জাংক ফুড এবং রেস্টুরেন্টে বা রাস্তার স্টলে তৈরী ফার্স্টফুডে অধিকাংশ সময়েই মাত্রারিক্ত সম্পৃক্ত ফ্যাট, ফুড কালার, লবণ অথবা অন্য সোডিয়াম উপাদান থাকে। যা নিয়মিত খাদ্য হিসাবে গ্রহন করলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যারা উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা সুস্থভাবে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার জন্যে জাংক ফুড এবং ফার্স্ট ফুড একদম এড়িয়ে চলবেন।
![]() |
সুস্থ থাকার জন্যে প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকুন |
উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে নিয়মিত ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য হাঁটাচলা এবং শরীরচর্চা, মানসিক চাপ মুক্ত থাকার জন্য মেডিটেশন, সুস্থ পারিবারিক এবং সামাজিক সম্পর্ক, বাড়িতে তৈরী স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।
নিজে ভালো খাকুন এবং অন্যদের ভালো রাখুন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন