যে লক্ষণগুলি দেখলে বুঝবেন যে আপনার কর্মস্থল পরিবর্তন করার সময় হয়ে এসেছে - Jana Dorkari Bangla

Breaking

সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০২৪

যে লক্ষণগুলি দেখলে বুঝবেন যে আপনার কর্মস্থল পরিবর্তন করার সময় হয়ে এসেছে

যে লক্ষণগুলি দেখলে আপনি বুঝবেন যে আপনার কর্মস্থল পরিবর্তন করার সময় হয়ে এসেছে

গত দুই বছর ধরে সারা বিশ্বজুড়ে কর্মী ছাঁটাই এর ধারা অব্যাহত রয়েছে। কে কত সংখ্যক কর্মী ছাটাই করবে তাই নিয়ে বড় বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলির মধ্য বিপুল প্রতিযোগিতা চলছে। প্রায় প্রতিটি কর্মীসংকোচনের কারণ হিসাবে কোম্পানিগুলির পক্ষ থেকে অতিরিক্ত খরচ কমানো অথবা তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন যে কোভিডের সময় ওয়ার্ক ফ্রম হোমের জন্য সংস্থাগুলি অতিরিক্ত হিউম্যান রিসোর্সে অর্থ খবচ করে ফেলেছিলো। এখন বিনিয়োগ কারীদের চাপে সংস্থাগুলি অতিরিক্ত খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছে ফলস্বরূপ কর্মী সংকোচন দেখা যাচ্ছে। তবে বর্তমানে উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব কর্মী সংকোচনের অন্যতম কারণগুলির মধ্যে একটি হতে পারে। 

তবে একমাত্র সংস্থার কর্মী সংকোচন কিন্তু আপনার কর্মস্থল পরিবর্তনের কারণ হতে পারেনা। কর্মস্থল পরিবর্তন কেন এবং কোন পরিস্থিতে করা প্রয়োজন এখন সেই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করবো।

kormosthol/job change kora dorkar
Image by freepik

অফিসের পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যতা না থাকলেঃ 

আপনি প্রতিদিন কতটা সময় আপনার অফিসে কাজ করেন? সেটা নিশ্চয়ই আট ঘন্টা থেকে চোদ্দ ঘন্টার মধ্যে হবে।  তাই অনেকের মতে আপনার অফিস আপনার দ্বিতীয় বাড়ি। কিন্তু বাড়ি এবং অফিস দুটি জায়গা একসাথে গুলিয়ে ফেলা যায় না। অফিসের একটি স্বতন্ত্র পরিবেশ আছে। এখন প্রশ্ন আপনি কি আপনার অফিসের পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
আপনার অফিসের পরিবেশের  নুন্যতম স্বাচ্ছন্দ্যতা মাপার জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি লক্ষ্য করতে হবে-

No Essential requirements
(i) অফিস লোকেশন
(ii) যোগাযোগ ব্যাবস্থা
(iii) অফিসের বাইরে পার্কিং প্লেস
(iv) অফিসের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা
(v) নিরাপত্তা ব্যাবস্থা
(vi) পানীয় জল
(vii) ফার্স্ট এইড
(viii) পুরুষ এবং মহিলা কর্মীদের জন্য আলাদা টয়লেট
(ix) অগ্নি নির্বাপক ব্যাবস্থা
(x) অফিস ক্যান্টিন

যদি আপনার অফিসে ওপরে উল্লেখ করা নুন্যতম বিষয়গুলির দিকে গুরুত্ব না দেওয়া হয়, তাহলে অবশ্যই এই বিষয়গুলি আপনার অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনুন। তার পরেও যদি আপনার অফিসে এই নুন্যতম স্বাচ্ছন্দ্যতাগুলি না থাকে, তাহলে আপনি আপনার কর্মস্থল পরিবর্তন করার কথা ভাবতে পারেন।

 

অফিস পলিটিক্সঃ

অফিস পলিটিক্সের সঙ্গে আমরা সবাই মোটামুটি পরিচিত। অফিস পলিটিক্স এক ধরনের ম্যানুপুলেশন টেকনিক। অফিস পলিটিক্স সাধারণত সংস্থার স্বার্থে অথবা নিজের ব্যাক্তিগত স্বার্থে ব্যাবহার করা হয়। ফলে যে কোনো সংস্থার উচ্চপদস্থ ম্যানেজার থেকে সাধারণ কর্মী সকলকেই এই অফিস পলিটিক্সে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। আপনার কোম্পানির এইচআর(HR) নিশ্চয়ই অফিসের সহকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের আয়োজন করেন যেমন বার্থ ডে উইশ বা সেলিব্রেশন, এমপ্লোয়ি অফ দ্য মানথ, ম্যারেজ আনিভার্সিটি উইশ,  আউটডোর অ্যাক্টিভিটি, দেওয়ালির সময় রঙ্গোলি ইত্যাদি। এগুলো সবই হোয়াইট অফিস পলিটিক্সের অঙ্গ। এক্ষেত্রে অফিস পলিটিক্স আপনাকে মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য দিয়ে থাকে। 

কিন্তু অফিস পলিটিক্সের সবথেকে পরিচিত এবং অন্ধকার দিক হলো ডার্ক অফিস পলিটিক্স। ডার্ক পলিটিক্স অনেকগুলো কারণে হতে পারে যেমন -

No. Reasons
(i) নিজের প্রোমোশনের জন্য
(ii) নিজের চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য
(iii) কোনো কর্মীকে চাকরি থেকে নিজের ইচ্ছায় ইস্তফা দিতে বাধ্য করার জন্য
(iv) কোনো কর্মীর অন্য সংস্থায় যাওয়া আটকানোর জন্য
(v) সহকর্মীর প্রোমোশন আটকানোর জন্য
(vi) নিজের পছন্দের লোককে চাকরিতে নিয়োগ, প্রোমশন বা অন্য সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য
(vii) অন্য সহকর্মীর সাফল্যে ইর্ষান্বিত হয়ে তার ক্ষতি করার চেষ্টা
(viii) অন্য সহকর্মীর সঙ্গে শত্রুতার জোরে তার ক্ষতি করার চেষ্টা ইত্যাদি

যদি আপনি আপনার কর্মস্থলে বার বার ডার্ক অফিস পলিটিক্সের শিকার হয়ে পড়ছেন বা ডার্ক অফিস পলিটিক্সের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছেন তবে অবশ্যই আপনি দিনের শেষে অথবা মাসের শেষে অথবা বছরের শেষে একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন যে আপনি কি এই ডার্ক অফিস পলিটিক্সের মধ্যে নিজেকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন? যদি আপনার উত্তর না হয় তাহলে অবশ্যই আপনাকে নিজের কর্মস্থল দ্রুত পরিবর্তনের কথা ভাবতে হবে। 


অর্থনৈতিক কারণঃ 

ক্রমবর্ধমান মুল্যবৃদ্ধি আপনাকে অবশ্যই আপনার অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে। জীবনে নুন্যতম প্রয়োজনীয় জিনিসগুলির মুল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আপনার উপার্জন বেড়েছে কি? আপনি প্রতি মাসে কতটাকা সঞ্চয় করতে পারেন? আপনি কি ক্রেডিট কার্ডের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল? এই প্রশ্নগুলোর আপনার উত্তর যদি যথাক্রমে "না, স্যালারির 1% এর কম এবং হ্যাঁ" হয় তাহলে অবশ্যই আপনাকে আপনার কর্মস্থল সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা করতে হবে।

এছাড়া আরো কতগুলি অর্থনৈতিক কারণ আছে সেগুলো খেয়াল রাখা দরকার। এখানে বড় প্রশ্ন এই যে আপনি কি আপনার শ্রম এবং মুল্যবৃদ্ধি  অনুযায়ী অর্থ উপার্জন করতে পারছেন? এখন আপনার কোম্পানি যদি তার অর্থবর্ষে যথেষ্ট মুনফা করে থাকে এবং আপনি যদি আপনার দিক থেকে কাজে আপনার সেরা পারফম্যান্স দিয়ে থাকেন, অথচ তারপরেও যদি প্রোমোশন, স্যালারি বা সিটিসি যদি না বাড়ে তাহলে অবশ্যই আপনাকে কর্মস্থল পরিবর্তন করার কথা ভাবতে হবে। 


অনৈতিক কাজকর্মঃ

আপনার সংস্থা কি আপনাকে দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত অনৈতিক কাজকর্ম করাচ্ছে যা আপনি হয়তো মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না। অথবা আপনি জানতে পারলেন যে সংস্থায় আপনি চাকরি করছেন সেখানে গোপনে বিভিন্ন ধরনের বে-আইনি কাজকর্ম হচ্ছে। এরকম সংস্থায় দীর্ঘদিন কাজ করা যেমন আপনার নিজের ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তেমনি আবার আপনার এবং আপনার পরিবারের সদস্যদের সন্মানহানি থেকে জীবনহানি হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরী হতে পারে। সুতরাং আপনার কর্ম সংস্থা যদি অনৈতিক বা বে-আইনি কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে তাহলে আপনি অতি দ্রুত আপনার কর্মস্থল পরবর্তন করার পরিকল্পনা শুরু করবেন। 

মানসিক সমস্যাঃ 
ওপরের লেখাগুলি থেকে লক্ষ্য করুন যে কর্মস্থল পরিবর্তন করার কারণগুলো সঙ্গে আপনার মানসিক চাপ বেড়ে যাওয়া অন্যতম কারণ হবে। প্রতিদিন অফিসে গিয়ে যদি আপনার স্ট্রেস লেভেল চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে, তাহলে ফলস্বরূপ চরম মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। মানসিক সমস্যার সঙ্গে শারীরিক সমস্যা গুলি ওতপ্রেত ভাবে জড়িয়ে থাকে। ফলে আপনার মাত্রারিক্ত মানসিক সমস্যা থাকলে ধীরে ধীরে আপনার দেহে বিভিন্ন ক্রনিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। সুতরাং আপনার মানসিক সমস্যাগুলি যদি আপনার সহ্যক্ষমতা অতিক্রম করতে শুরু করে, তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার কর্মস্থল পরিবর্তন করার কথা ভাবতে পারেন। 

অফিসের কাজের চাপে কর্মী
Photo by Antoni Shkraba


এতক্ষণ ধরে যে কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো, সেগুলো আপনার স্ব-ইচ্ছায় আপনার কর্মস্থল পরিবর্তন করার কারণ হতে পারে। কিন্তু এবার এমন কিছু পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো আপনার সঙ্গে হলে ধরে নিতে পারবেন যে সংস্থা এবার আপনাকে ছাঁটাই করতে চলছে অর্থাৎ আপনার কর্মস্থল বাধ্যতামূলকভাবে পরিবর্তন করতে হতে পারে

প্রোজেক্ট থেকে সরিয়ে দেওয়াঃ আপনার পারফরম্যান্স ভালো থাকা সত্ত্বেও কোনো চলতে থাকা প্রোজেক্ট থেকে যদি যথাযথ কারণ ছাড়াই আপনাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

বেঞ্চে বসে থাকাঃ একটা প্রোজেক্ট শেষ হওয়ার পর পরবর্তী প্রজেক্ট পাওয়ার জন্য আপনি যদি এক মাসের বেশী সময় ধরে অপেক্ষারত হয়ে বেঞ্চে বসে থাকেন, তাহলে আপনার ভাবনাচিন্তা করার সময় এসেছে।

গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে না ডাকাঃ যেসব অফিস মিটিংয়ে আপনার উপস্থিত থাকা জরুরি অথচ আপনার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি আপনাকে সেই মিটিংয়ে যোগদান করার জন্য ইনভাইট না করে।

কাজের চাপ কমানোঃ আপনার ওপর কাজের চাপ  কমানোর জন্য আপনার কাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলির দায়িত্ব যদি আপনার সহকর্মীকে দেওয়া হয়।

কারোর চাকরি যাবেনাঃ যদি আপনার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ হঠাত ঘোষণা করে যে আপনাদের অফিসে চাকরি ছাঁটাই নিয়ে দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। তাহলে আপনার ভাবনাচিন্তা করার সময় এসেছে। 

হঠাত মিটিংঃ কোনো আগাম আভাস না দিয়েই যদি আপনাকে HR অথবা ম্যানেজারের পক্ষ থেকে  মিটিংয়ে ডাকা হয়। তাহলে মিটিং যাওয়ার আগেই আপনার ডেস্ক গোছানো শুরু করে দেবেন।

আধুনিক কর্পোরেট অফিস
Photo by Israel Andrade on Unsplash

অনেক নিয়োগ বিশেষজ্ঞদের মতে, হঠাত করে কর্মস্থল পরিবর্তন করতে বাধ্য হলে অথবা নিজের ইচ্ছায় কর্মস্থল পরিবর্তন করলেও অনেক সময় বেশ কিছু মানসিক টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। নিজের ইচ্ছায় কর্মস্থল পরিবর্তন করতে চাইলে অবশ্যই পরিকল্পনা করে এগোনোর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত । অনেক সময় এমনও দেখা যায় এক সংস্থা পরিবর্তন করে নতুন সংস্থায় যাওয়ার পর নতুন সংস্থার কাজের পরিবেশ ভালো না লাগায় আবার সুইচ করে আগের সংস্থায় ফিরে এসেছে।

কোন মন্তব্য নেই: