মানুষ হিসাবে কিভাবে নিজেকে টিকিয়ে রাখবেন? - Jana Dorkari Bangla

Breaking

রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

মানুষ হিসাবে কিভাবে নিজেকে টিকিয়ে রাখবেন?

 পৃথিবীতে সবকিছু এত দ্রুত বদলে যাচ্ছে যে মানুষ একটু ভাবনাচিন্তা করার সুযোগ পাচ্ছে না। বরং বলা যেতে পারে যে সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে চায় না। এখন আধুনিক সভ্যতায় বাস করা প্রতিটি মানুষের মন ভয়ানক ভাবে অশান্ত। তাদের একটাই চিন্তা কিভাবে আমি টিকে থাকবো? কেউ কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকার কথা ভাবছে, কেউ তার বাসস্থানে টিকে থাকার কথা ভাবছে, কেউ সম্পর্ক টিকে থাকার কথা ভাবছে, আবার কেউ তার শরীর টিকে থাকবে কি না ভাবছে। এবং এই ভাবনা খুব দ্রুত ডিপ্রেশনে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। কারণ পৃথিবীতে এখন প্রায় অধিকাংশ মানুষ খুবই একা। 

Modern human should deal with AI
AI এর কল্পনায় - মানুষ কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবটের সঙ্গে জটিল আলোচনায় ব্যাস্ত

মানুষ যখন সামাজিক জীব ছিলো তখন তারা বিভিন্ন গোষ্ঠীতে একসঙ্গে বসবাস করতো। মানুষ তার চিন্তা ভাবনা, মানসিক আবেগ, অনুভূতি ইত্যাদি একে অন্যের সঙ্গে বিনিময় করতো। মানুষ বড় সহজ সরল ছিলো তখন। মানসিক দুশ্চিন্তায় কম ভুগতো। সময় বদলেছে পৃথিবী বদলাচ্ছে। আধুনিক সভ্যতার মানুষ আবেগকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছে অথবা বলা যেতে পারে যে মানুষের আবেগকে সহজেই নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে। মানুষ বেশ একা একা থাকতে শুরু করেছে। আগে কোনো সমস্যায় পড়লে মানুষ তাদের আপনজনদের পরামর্শ নিত অথবা পরামর্শদাতা নিয়োগ করতো। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে সেসব করার দরকার পড়েনা। সার্চ ইঞ্জিন বা চ্যাট বট কে সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করলেই সহজেই সমাধান পাওয়া যায়। মানুষ এখন মাথা খাটিয়ে সমস্যার সমাধান করতে চায় না।

তাহলে মানুষ এখন কি করে? উত্তরে বলা যায় পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষকে এখন যা করতে বলা হয় তাই করে এবং এমন কাজ তারা ক্রমাগত করতে থাকে যেখানে তাদের বেশী ভাবনা চিন্তা করতে হয় না। মানুষের এখন জটিল এবং গভীর চিন্তাভাবনা করার ধৈর্য্যশক্তিও অনেক কমে গেছে। সবাই অতিদ্রুত ফলাফল এবং মানসিক প্রশস্তি পেতে চায়। মানুষ এখন কোনটা বাস্তব আর কোনটা অবাস্তব সেটাই বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপরে নির্ভরতা ছাড়া মানুষের আর কোনো উপায় নেই।

তবে পৃথিবীতে টিকে থাকার লড়াই কিন্তু ক্রমাগত চলছে এবং চলতে থাকবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমাগত উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অনেক জীবিকার অবলুপ্তি হয়ে গেছে এবং যাবে। প্রাচীন কাল থেকে পৃথিবীতে অনেক পেশার অবলুপ্তি ঘটেছে এবং নতুন পেশার সৃষ্টি ঘটেছে। একসময় কিন্তু পাথরে পাথর ঠুকে আগুন জ্বালানো কে একটা পেশা মনে করা হত। যদি বলা যায় আগামী দশ-বিশ বছরের মধ্যেই কম্পিউটারের অবস্থা এখনকার দিনের রেডিওর মত হবে। আরো যদি বলা যায় যে এখনকার ইন্টারনেট প্রযুক্তি আগামী তিরিশ বছরের মধ্যে প্রাচীনকালের টেলিগ্রাফের মত হবে। এগুলো আমাদের মানতে বিশ্বাস হয় না। কিন্তু এটা চিরন্তন সত্য যে সৃষ্টি হলে তার বিলুপ্তি হবে। কিন্তু রেডিও টেলিগ্রামের যুগের কিছু মানুষ এখনো বেশ ভালভাবে টিকে আছেন, কিভাবে জানেন? নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা, নিয়মিতি জ্ঞানচর্চা এবং পরিবর্ত পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে চলার কারণে। 

শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যার ওপরে নির্ভর করে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন হয় না। এখন পৃথিবীতে মানুষের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও পুঁথিগত জ্ঞানভান্ডারে পরিপূর্ণ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্রিটিক্যাল চিন্তাভাবনা করা শিখছে। কিন্তু মানুষ ক্রমশ জটিল বিশ্লেষণ ধর্মী চিন্তাভাবনা করা ছেড়ে দিচ্ছে। তবে বাস্তব জগতের কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে এই ক্ষমতা মানুষের এখনো আছে। মানুষ অনেকসময়ই সিদ্ধান্তে পৌছানোর আগে এখনো হ্যাঁ এবং না এর মধ্যবর্তী স্থানে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে পারে। কারণ মানুষের বুদ্ধিমত্তা বহুমাত্রিক যা সময়ের সাপেক্ষে বিশ্লেষণ করতে পারে। এছাড়া মানুষের মন প্রাকৃতিক এবং জৈবিক চাহিদা দ্বারা প্রভাবিত হয়।

মানুষ যতদিন সময় এবং তার নিজের কাজ বা দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকবে ততদিন কোনো বাধা তার অগ্রগতিকে আটকাতে পারবে না। সময়ের পরিবর্তন হবে, কাজের ধরনের পরিবর্তন হবে, বিভিন্ন মতবাদের পরিবর্তন হবে। কিন্তু মানুষ তার বুদ্ধিমত্তার ওপরে নির্ভর করেই নিজেদের অস্তিত্বকে বজায় রাখবে।

এবার নিজেকে প্রশ্ন করুন যে আপনি নিজেকে কিভাবে টিকিয়ে রাখবেন

কোন মন্তব্য নেই: