রেসিপি বিরিয়ানি - পর্ব ২ - শীতের সবজি দিয়ে ভেজ বিরিয়ানি - Jana Dorkari Bangla

Breaking

বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৩

রেসিপি বিরিয়ানি - পর্ব ২ - শীতের সবজি দিয়ে ভেজ বিরিয়ানি

রেসিপি বিরিয়ানি - শীতের সবজি দিয়ে ভেজ বিরিয়ানি

সুস্বাগতম জানা দরকারি ব্লগের সকল পাঠক বন্ধুরা। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশাকরি সবাই ভালো আছেন। বন্ধুরা উৎসবের দিনগুলো আপনাদের কেমন কাটলো? সবাইকে আমার প্রণাম, ভালবাসা এবং আন্তরিক অভিনন্দন। চূড়ান্ত ব্যাস্ততার মধ্য দিয়েই যেন উৎসবের রঙ্গীন দিনগুলো কেটে গেল। তবু শত ব্যাস্ততার মধ্যেই আপনাদের জন্য লিখে ফেললাম ভেজ বিরিয়ানি-র দ্বিতীয় পর্ব। 

ভেজ বিরিয়ানি



ভেজ বিরিয়ানি বনাম বিরিয়ানি-র দ্বিতীয় পর্বে আপনারা শিখতে চলেছেন শীতের সবজি দিয়ে ভেজ বিরিয়ানি। শীতের শুরুতে আলু এবং বাজারে ওঠা নতুন ফুলকপি, গাজর দিয়ে বিরিয়ানি তৈরী করার প্রস্তুতি শুরু করা যাক। বিরিয়ানির সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন অংশ হলো পেঁয়াজের বেরেস্তা তৈরী করা। আমি দাবি সহ বলতে পারি যে এটা যদি আপনি ঠিক মত বানাতে পারেন তাহলে বিরিয়ানির অর্ধেক স্বাদ সেখানেই তৈরী হয়ে যাবে। ঝামেলা এড়ানোর জন্য আপনি বাজার থেকে ভাজা পেঁয়াজ অর্থাৎ Fried Onion এর প্যাকেট কিনে এনে ব্যাবহার করতে পারেন। তবে আপনি নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন যে প্যাকেটজাত এবং নিজের হাতে তৈরী উপাদানের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ থাকে। 

বেরেস্তা তৈরী:
এখন প্রশ্ন আসে যে কি তেল ব্যাবহার করবো? সাদা তেল না সরষের তেল। যদিও আমি সবসময় রান্নায় সরষের তেল ব্যাবহার করার পরামর্শ দেই। তবে এক্ষেত্রে যেকোনো সাদা তেল ব্যাবহার করবেন। তেলের পরিমাণটা একটু বেশী হবে কারণ এই তেলেই আমাদের গোটা বিরিয়ানি রান্নাটি করতে হবে। পেঁয়াজ বেরেস্তা বানানোর জন্য প্রথমে তেলটাকে ভালো করে গরম করে নেবেন। গরম হওয়ার পর কুচানো পেয়াজগুলকে তেলে ছাড়বেন। সেই গ্যাস ওভেনের আঁচ সর্বাধিক থাকবে। পেঁয়াজ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক চামচ লবণ দিয়ে  হালকা করে নাড়াতে থাকবেন। 

এক মিনিট পরেই ওভেনের আঁচ কমাতে শুরু করবেন। কম আঁচে ধীরে ধীরে পাঁচ মিনিটের মত ভাজতে থাকবেন যতক্ষন না পেঁয়াজ কুচির রঙ বদলাতে শুরু করে ।  পাঁচ মিনিট পরে পেঁয়াজ কুচির রং কি এবার বদলে গিয়ে একটু সোনালী রঙ হয়েছে? যদি না হয় তাহলে ওভেনের আঁচ কম রেখেই আরও এক মিনিট তেলে ভাজা পেঁয়াজ করে হালকা নাড়তে থাকুন। 

পেঁয়াজের বেরেস্তার রঙ সোনালী হওয়ার পরেই একটা স্পাইডার স্টেইনার নিয়ে  তাড়াতাড়ি তেল থেকে বেরেস্তাগুলো তুলে নিতে হবে । এবার হাতের কাছে ব্লটিং পেপার থাকলে সেটা দিয়ে বেরেস্তা থেকে তেল শুষিয়ে নিন আর যদি ব্লটিং পেপার না থাকে তাহলে যেমন আছে তেমনি রেখে দিন। 

fried onion


উপকরণ:
এখন চাল নির্বাচনের পালা। অনেকেই বিরিয়ানিতে লম্বা চালের ভাত পছন্দ করে। আমার মতে বিরিয়ানিতে অতি সুগন্ধি বাসমতী চাল ব্যবহার করা উচিত নয়। সেক্ষেত্রে চালের সুগন্ধে বিরিয়ানি যেন পোলাওয়ে পরিণত হয়ে যায়। তাই আমি এবার বিরিয়ানি রান্নার জন্য 500 গ্রাম বাশকাঠি চাল নিয়েছিলাম। বিরিয়ানির চাল ধুয়ে নেওয়ার পর চেষ্টা করবেন অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে।

এবার আলু, গাজর এবং ফুলকপিগুলিকে কেটে তৈরি করতে হবে। বিরিয়ানিতে আলুর ব্যাপারে একদম কৃপণতা করবেন না। তবে গোটা আলু না দিয়ে অর্ধেক কেটে দেবেন এবং ফুলকপির পিসগুলো বড় রাখবেন। শীতকালে ভেজ বিরিয়ানিতে আলু, গাজর, ফুলকপি অথবা ব্রকলি দেওয়া যেতে পারে। সবজিগুলোকে ধুয়ে একটা বড় পাত্রে রাখুন। এবং নীচের মশলাগুলো তৈরী করুন -

        (i) শুকনো লংকা বাটা/গুড়ো - ১ টেবিল চামচ
        (ii) আদা বাটা - ২ টেবিল চামচ
        (iii) ধনে গুঁড়ো/বাটা - ১ টেবিল চামচ
        (iv) বিরিয়ানি মশলা - ২ টেবিল চামচ

(বিরিয়ানির মশলা আপনি বাজার থেকে বা অনলাইনে কিনে এনে ব্যাবহার করতে পারেন। তবে আমি আমার পরবর্তী ব্লগে বিরিয়ানি মশলার রেসিপি নিয়ে আলোচনা করবো।) 

এবার সবজির পাত্রটি নিয়ে ওতে ১০০গ্রাম টকদই, শুকনো লংকা বাটা/গুড়ো, আদা বাটা, ধনে গুড়ো, হলুদ এবং ১ চামচ বিরিয়ানি মশলা মেশিয়ে দিন। সাথে এক চামচ লবণ দিন। বেরেস্তা যে তেলে দিয়ে ভেজেছিলেন, সেই তেলের কিছু অংশ সবজিতে দিন এবং ভালো করে মিশিয়ে ম্যরিনেট করে দশ মিনিটের জন্য রেখে দিন। 

বিরিয়ানি তৈরী:
এখন আপনার বেরেস্তা ভাজা কড়াইয়ে কতটা তেল অবশিষ্ট আছে? যদি দুই চামচ তেল থাকে তাহলেই তো যথেষ্ট। এবার কড়াই পুনরায় গরম করুন। তেল গরম হয়ে উঠলে সবজির পাত্র থেকে প্রথমে ম্যারিনেট করা আলু দিন। তারপর ফুলকপিগুলো দিন। সব্জিগুলো ভালমতো নাড়ুন। সব্জি দেওয়ার ৩০ সেকেন্ড পর সবজির পাত্রে যে ম্যরিনেট করা অবশিষ্ট দই মশলা আছে সেটা কড়াইতে দিয়ে দিন। মশলা দেওয়ার পর একটু নাড়িয়ে দিয়ে এবার কড়াইটা ঢেকে দিন ২ মিনিটের জন্য। এই সময় উনুনের আঁচ মাঝামাঝি পর্যায়ে রাখবেন।

দুই মিনিট পরে কড়াইয়ের ঢাকনা খুলে পুনরায় সব্জিগুলো নাড়িয়ে দিন। এই পর্যায়ে মশলা শুকিয়ে এলে কড়াইতে একটু জল দিতে পারেন। এবার পুনরায় কড়াইয়ে ঢাকনা চাপিয়ে দিন আরো ৩ মিনিটের জন্য। 
তিন মিনিট পরে লক্ষ্য করে দেখুন তো মশলা থেকে তেল আলাদা হয়ে যাচ্ছে কিনা। যদি তাই হয় তাহলে এই পর্যায়ে হাফ লিটার জল ধীরে ধীরে সবজিতে দিয়ে দিন। এই জল আগে থেকে গরম করা থাকলে খুব ভালো আর না থাকলেও কোনো অসুবিধা নেই। এবার পুনরায় কড়াইয়ে ঢাকনা চাপিয়ে ৫ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন। এই পর্যায়ে আপনার রান্না করা সব্জিগুলো ভালোভাবে সেদ্ধ হবে। 

পাঁচ মিনিট পরে কড়াইয়ের ওপর থেকে পুনরায় ঢাকনা খুলে দেখুন। আপনি নিশ্চয় এবার রান্নার একটা সুগন্ধ অনুভব করবেন। একটি কাটা চামচ নিয়ে পরীক্ষা করে দেখুন যে আলুটা সেদ্ধ হলো কিনা। আলু যদি সেদ্ধ হয়ে আসে তাহলে তরকারির লবণ পরীক্ষা করুন। আপনার বিরিয়ানির তরকারী এই দুইটি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হলে পুনরায় কড়াইয়ে ঢাকনা দিয়ে দুই থেকে তিন মিনিট ফোটাবেন যাতে ঝোলের পরিমাণ কিছুটা কমে আসে। তবে মনে রাখবেন তরকারীর ঝোলটা একেবারে শুকিয়ে ফেলবেন না।

বাড়িতে বিরিয়ানি রান্নার সময় দুইটি হাঁড়ি বা ডেকচি ব্যাবহার করবেন। একটিতে রিরিয়ানির ভাত তৈরী করবেন এবং অন্যটিতে বিরিয়ানির লেয়ারিং করবেন। আমরা তখনই ভুল করি যখন হাঁড়িতে বিরিয়ানির রাইস তৈরী করার পর সেই হাঁড়ি থেকে ভাত বের করে অন্য পাত্রে রেখে পুনরায় সেই হাঁড়ি বিরিয়ানির লেয়ারিং-এর জন্য ব্যবহার করি। এতে আমাদের বিরিয়ানির ভাতগুলির কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যায়।

 তরকারির কড়াইটা আঁচ থেকে নামিয়ে যে হাঁড়িতে বিরিয়ানির লেয়ারিং করা হবে সেটাকে উনানের হালকা আঁচে বসাতে হবে। বিরিয়ানির হাঁড়িতে এক টেবিল চামচ ঘি দিন।  শীতকালে কৌটায় রাখা ঘি জমে যায়। বিরিয়ানি রান্নার সময় কখনই ঘি সরাসরি কৌটা থেকে চামচে তুলে ভাতে বা তরকারীতে দিয়ে দেবেন না। আর তাই এবার ঘি গরম হয়ে ধোয়া উঠতে শুরু করলেই ওভেনের আঁচ কমিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কড়াইতে থাকা তরকারী বিরিয়ানির হাঁড়িতে দিয়ে দিন। তরকারীটা একটু নাড়িয়ে বিরিয়ানির হাঁড়িটির মুখে একটি ঢাকনা রেখে ওভেন থেকে বিরিয়ানি হাড়িটি নামিয়ে রখুন। 


এরপর আমাদের কিছু গোটা মশলা এবং সুগন্ধী হাতের কাছে এনে রাখতে হবে। সেগুলো নিচে লিখে দিলাম-
        (i) তেজপাতা - ১ টা
        (ii) লবঙ্গ - ২ টা 
        (iii) এলাচ - ২ টা
        (iv) দারচিনি - ১ ইঞ্চি করে ২ টা
        (v) তাঁরা ফল বা স্টার এনাইজ - ১ টা 
        (vi) জয়িত্রী - ১ চামচ
        (vii) গোলমরিচ - ৩ টা
        (viii) গোলাপ জল - ২ চামচ
এবং
        (ix) সাদা তেল - ১ চামচ
        (x) একবাটি দুধে গলিয়ে রাখা কেশর
        (xi) কেওড়া জল - ২ চামচ
        (xii) মিঠা আতর - ৩ ফোঁটা

বিরিয়ানির রান্নার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হলো বিরিয়ানির রাইস বা ভাতটি তৈরী করা। খালি হাঁড়ি বা ডেকচি নিয়ে ওভেনের ওপর বসান। আমি ৫০০ গ্রাম চালের জন্য দুই লিটার জল নিয়েছিলাম। আপনি এই হিসাবে আপনার নেওয়া চালের পরিমাণ মত জল দেবেন। জলের মধ্যে ওপরে উল্লেখ করা সমস্ত গোটা মশলাগুলো একটার পর একটা দিন। গোটা মশলা দেওয়া হয়ে গেলে, হাঁড়ির জল টগবগ করে ফোঁটা পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করুন। এর মধ্যে জলে ভেজানো চাল থেকে জলটা ফেলে দিন।

জলটা কি এবার ফুটতে শুরু করেছে? যদি তাই হয় তাহলে এবার ফুটন্ত জলের মধ্যে ভালবেসে দুই চামচ লবণ দিন। মনে রাখবেন, এই পর্যায়ে জলে লবণ দিতে যদি আপনি ভুলে যান, তবে সমগ্র বিরিয়ানিটা স্বাদহীন হয়ে যাবে। এবার একটা খুন্তি বা হাতা দিয়ে জলটা নাড়িয়ে দিন এবং এবার একফোঁটা জল নিয়ে দেখুন যে জল নোনতা হয়েছে কিনা। 

 ফুটন্ত জল থেকে ঝাঁঝরি বা স্পাইডার স্টেইনার ব্যাবহার করে গরম জল থেকে সমস্ত গোটা মশলাগুলো তুলে নেবেন। তারপর আপনি ফুটন্ত জলের মধ্যে ধীরে ধীরে বিরিয়ানিরগুলো চাল ছেড়ে দেবেন।

হাঁড়িতে চাল দেওয়ার পর ওর মধ্যে দুই চামচ সাদা তেল দিন। এই সাদা তেল দিলে বিরিয়ানির রাইস কখনই পরস্পর জড়িয়ে যাবে না। এরপর ওভেনের আঁচ সর্বাধিক রাখুন। অধিক আঁচে আপনার বিরিয়ানির রাইসগুলো লম্বায় বাড়বে। বিরিয়ানি রান্নার সময় চাল বেশী নাড়াবেন না। এতে চাল ভেঙ্গে যেতে পারে। পাঁচ মিনিট পর হাতা বা খুন্তির সাহয্যে একটা চালের দানা তুলে নিয়ে দেখুন যে কতটা সেদ্ধ হয়েছে। আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে কি শক্ত চাল আছে না একটু নরম ভাত বোঝা যাচ্ছে।

আরো দুই মিনিট পর আবার ভাত নিয়ে আঙ্গুল দিয়ে দেখুন যে নরম হয়েছে কি না। যদি মনে হয় একটু নরম হয়েছে, তাহলে ওভেনের আঁচ কমিয়ে দিন। এবার ভাত মুখে নিয়ে দাঁত দিয়ে কেটে দেখুন যে কতটা শক্ত ভাব আছে। যদি এখনো শক্ত চাল থাকে তবে এই পরিক্ষাটি তিরিশ সেকেন্ড অন্তর অন্তর করবেন। এক পর্যায়ে এসে আপনার যদি মনে হয় যে ভাত হালকা শক্ত আছে তাহলে আবিলম্বে উনুন থেকে ভাতের হাড়িটি  নামিয়ে নিন। অর্থাৎ আপনার বিরিয়ানির চাল ৮০% শতাংশ সেদ্ধ হয়ে গেছে। ভাতের হাঁড়িতে ঢাকনা দেবেন না।

লেয়ারিং:
এবার অতিদ্রুত বিরিয়ানির হাঁড়িটি (অর্থাৎ যে বড় হাঁড়ির মধ্যে লেয়ারিং-এর তরকারী রেখেছিলেন) সেটাকে আপনার কাছে এনে ঢাকনা খুলুন। ভাতের হাঁড়িতে থেকে ঝাঁঝরি বা স্পাইডার স্টেইনার দিয়ে ধীরে ধীরে ভাত তুলে নিয়ে অতি যত্ন সহকারে বিরিয়ানির তরকারীর সমানভাবে ওপর ছড়িয়ে দিতে থাকুন অর্থাৎ লেয়ারিং করতে থাকুন। আমি বিরিয়ানি রান্নার সময় দ্বিস্তরীয় লেয়ারিং করা পচ্ছন্দ করি অর্থাৎ নীচে আলু-ফুলকপির তরকারী আর ওপরে বিরিয়ানির ভাত। কিন্তু লেয়ারিং করার সময় আপনি কখনই হাতের ব্যাবহার করবেন না। এতে বিরিয়ানির ভাত ভেঙ্গে যেতে পারে। আপনি হালকা ভাবে হাঁড়িতে যতটা রাইস রাখতে পেরেছেন ততটাই যথেষ্ট। 

আশা করি আপনি লেয়ারিং-এর পর্যায়টি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছেন। এবার বিরিয়ানির রাইসের ওপর প্রথমে দুধে গোলানো কেশর বা জাফরান রং W আকারে ছড়িয়ে দিন। যদি কেশর না থাকে তবে গরম জলে গোলানো ফুড কালার ব্যাবহার করতে পারেন।  এরপর ভাতের ওপর গোল করে এক চামচ বিরিয়ানি মশলা হালকাভাবে ছড়িয়ে দিন। আবশিষ্ট যে বেরেস্তাগুলো(ভাঁজা পেঁয়াজ) আছে সেগুলো রাইসের ওপর সমানভাবে ছড়িয়ে দিন। এরপর ভাতের ওপর এক চামচ গোলাপ জল ছড়িয়ে দিন। আপনি চাইলে বিরিয়ানির ওপর ধনে পাতা বা কারি পাতা এবং গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দিতে পারেন। এটা অপশনাল। সবশেষে ভাতের ওপর দুই ফোঁটা মিঠা আতর এবং এক চামচ কেওড়া জল দেবেন। 

এবার বিরিয়ানির দম দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। বিরিয়ানি ভাত রান্নার মত দম দেওয়াও একটি অতি গুরুত্বপুর্ণ পর্যায়। আপনি বিরিয়ানির হাঁড়ি কিভাবে সিল করবেন? এসব নিয়ে এখনই চিন্তা মাথায় আনতে আমি আপনাকে পরামর্শ দেবো না। বরং আপনি বাড়িতে থাকা পরিস্কার সুতির কাপড় গোল করে পাকিয়ে হাঁড়ির মুখে লাগিয়ে দিন।

কম আঁচে বসাতে হবে 
একটি হাতায় এক টেবিল চামচ ঘি নিয়ে ওভেনের আঁচের ওপর ধরে রাখুন যতক্ষন না ঘি থেকে ধোঁয়া বের হয়। ধোঁয়া ওঠা ঘি বিরিয়ানির ভাতের ওপর ছড়িয়ে দিয়ে হাঁড়ির ঢাকনা অতিদ্রুত বন্ধ করে দিন। এবার ওভেনে রুটি সেঁকার তাওয়া/তাবা বসিয়ে দিন। বিরিয়ানির হাঁড়িতে ভালোভাবে তাওয়ার ওপর বসিয়ে দিন। বিরিয়ানির হাঁড়ির ওপর ভারী কোনো বস্তু যেমনঃ শিলনোড়া, বাটখারা চাপিয়ে দিন। ওভেনের আঁচ বাড়িয়ে সর্বাধিক করুন। 

এবার প্রথমে আমাদের সাত মিনিট ধরে সর্বাধিক আঁচে বিরিয়ানিতে দম দিতে হবে। অনেকে প্রথমে ডাইরেক্ট হিট দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমি আপনাকে সর্বদা পুরো বিরিয়ানি রান্নায় ইন্ডাকশন পদ্ধতিতে দম দেওয়ার পরামর্শ দেবো। 

সাত মিনিট অতিক্রন্ত হয়ে গেছে? তাহলে এবার দেরী না করে ওভেনের আঁচ একদম সর্বনিন্ম করে দেবন। এবার আপনাকে ঘড়ি ধরে আরোও ২৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। বিরিয়ানির রান্নার দম দেওয়ার সময় বিরিয়ানি হাঁড়ির কাছাকাছি থাকবেন। ২৫ মিনিট অতিক্রান্ত হওয়ার পরে ওভেনের আঁচ বন্ধ করে দিন। 

(বিঃদ্রঃ যদি আপনি ১৫ মিনিট (মোট ২২মিনিট) হওয়ার পর বিরিয়ানির গন্ধ অনুভব করেন, তাহলে সেক্ষেত্রে ২০ মিনিট (মোট ২৭মিনিট) সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরেই ওভেনের আঁচ নিভিয়ে দেবেন।)

বিরিয়ানির দম দেওয়া শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই হাঁড়ির ঢকনার সিল খুলতে যাবেন না। বিরিয়ানির হাঁড়ি আরো দশ মিনিট রেখে দিন । এতে বিরিয়ানির ভেতরে সুস্থির অবস্থা আসবে এবং বিরিয়ানির ভাতে সুগন্ধ বজায় থাকবে। 

এখন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন ... এই ধৈর্যের পরীক্ষা বড়ই কঠিন... কিন্তু যে ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে সেই প্রকৃত স্বাদ পায় সেটা বিরিয়ানি হোক কিংবা সাফল্যের।

দশ মিনিট পরে বিরিয়ানির হাঁড়ির ঢাকনা খুলে, অতি যত্ন সহকারে বিরিয়ানি পরিবেশন করুন 


আপনি এই বিরিয়ানি রান্নায় ব্যাবহৃত বাসন এবং রান্নার সামগ্রী কিনতে পারেন নীচের লিঙ্ক গুলো থেকে-

(i) স্পাইডার স্টেইনার বা জালিঃ এখানে ক্লিক করুন
(ii) বিরিয়ানির হাঁড়িঃ এখানে ক্লিক করুন
(iii) স্টিলের কড়াইঃ এখানে ক্লিক করুন
(iv) শাহী বিরিয়ানি মশলাঃ এখানে ক্লিক করুন
(v)  বেরেস্তা বা ফ্রাইড ক্রিপসি পেঁয়াজঃ এখানে ক্লিক করুন


এই রেসিপি রান্না আপনার কেমন লাগলো ? নীচে কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত শেয়ার করুন। আমরা খুব শীঘ্রই ফিরে আসবো পরবর্তী ব্লগ নিয়ে। ততক্ষন পর্যন্ত পড়তে থাকুন "জানা-দরকারি" "ভালো থেকে মন্দ সবকিছুই যে জানা দরকারি"। ধন্যবাদ

কোন মন্তব্য নেই: